বাঙ্গালী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ নাচ-গান




আমি আদর্শিক প্রগতিশীল বলে নাচ গান ভালোবাসি শৈশবকাল থেকে -
এই ৬৯ বয়সেও আমার ভালোবাসা নাচগান , তাই নিত্যদিন উপভোগ করি নৃত্য গীত।
নাচগান যারা ভালোবাসে না তারা মানুষ খুন করতে পারে । শুধু তাই না, বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে
জড়াতে পারে তাই দেশব্যাপী চাই নৃত্যগীত নাটক কবিগান যাত্রাগান
মুক্তিযুদ্ধের গানের অনুষ্ঠান ।যে গান ভালোবাসে না সে মানুষ খুন করতে পারে, শেক্সপিয়রের এই কথা হয়তো অনেকেই জানেন।

পৃথিবীতে গান ভালোবাসে না - ইদানীং
এমনদের সংখ্যা বাংলাদেশে বেড়ে গেছে।
বাড়বে না কেন?
কারণ
এখন আর দেখি না কোথাও
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতে। স্কুল কলেজে হয় না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান , নৃত্য গীত ,
মাঠে ময়দানে হয় না কবি গান, যাত্রাপালা।
রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, আধুনিক বাংলা গান, লালন গীতি, দেশাত্মবোধক গান, মুক্তিযুদ্ধের গান, অতুল প্রসাদের গানের আয়োজন
নিয়ে কোথাও অনুষ্ঠান হতে দেখি না।
যে জন্য চারিদিকে সাম্প্রদায়িকবাজদের
সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে একের পর এক অপরাধ কর্মকাণ্ডের ছড়াছড়ি যেমন -
ধর্ষণ, বলাৎকার, দখলবাজি,
চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, খুন - হত্যা ,
পরের জায়গা দখল করা, দাঙ্গাবাজ , শোষক ত্রাণচোর , ক্লিকবাজ , খাম্বাচোর , ভেজালকারী মজুদদার , মুনাফাখোর , আগুনসন্ত্রাসী , লুটেরা , ধান্ধাবাজ , চাটুকার , ঘুষখোর , ফরমালিনবাজ , প্রতারক , ষড়যন্ত্রবাজ , অমানুষ , ছিনতাইকারী , বালুচোর , সুদখোর ইত্যাদি - ইত্যাদি ।
গানে যে-কোনো দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খা , প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ-বেদনা ও সুখ-দুঃখের কাহিনি প্রকাশ পায়। মানুষ জীবনে যে স্বাদ মেটাতে পারে না সে স্বাদ মেটাতে চায় গানে।
কেউ মুগ্ধ হয় গানের সুরে। বসন্তের হাওয়া যেমন মৃত বনভূমির প্রাণে চেতনার সঞ্চার করে তেমনি গান মানুষের নিরানন্দ মনে বয়ে আনে আনন্দের বন্যা। শুধু আনন্দ কেন, গান মানুষকে দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করে, স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে গভীরভাবে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে। জীবনসংগ্রামে প্রেরণা জোগায়। এক কথায় গানকে বাদ দিয়ে মানুষের জীবনকে কল্পনা করা যায় না।
বাংলা গানের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অতি প্রাচীন। তবে এর উৎপত্তি কবে - কার আমলে হয়েছে তা আজও প্রায় অজানা। তবে বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন যে চর্যাগীতি তা অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। এই চর্যাগীতিকাই বাংলা গানের আদি নিদর্শন। এরপর দ্বাদশ শতাব্দীতে জয়দেব গীতগোবিন্দ রচনা করেন, যা বাংলা গানের ভুবনে এক নবতরঙ্গের সূচনা করে। রাজা বা সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে।
পাল রাজাদের আমলেও গানের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ঐ সময়ে মঙ্গলগীত নামে এক ধরনের গান বেশ জনপ্রিয় ছিল। মঙ্গলগীতির মধ্যে সামাজিক এবং ধর্মীয় দিকটার প্রাধান্যই বেশি ছিল। এর কিছুকাল পরেই কীর্তনগানের আবির্ভাব ঘটে। বাংলা সংগীতে কীর্তনগান এককালে জনপ্রিয় ছিল। বিদ্যাপতি এবং চণ্ডীদাস দুজনে ছিলেন কীর্তন সংগীতের প্রধান রচয়িতা। চৈতন্যের তিনজন ভাবশিষ্য বৃন্দাবন দাস, মুরারী দাস এবং গোবিন্দ দাস কীর্তনগান রচনা করে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।
মোগল শাসনামলে এই উপমহাদেশে গানের ব্যাপক প্রসার ঘটে। উচ্চাঙ্গ সংগীতের শ্রেণিবিন্যাসও এ সময় ঘটে। মোগল সম্রাটরা গানের খুবই ভক্ত ছিলেন। কথিত আছে, সম্রাট হুমায়ুন ১৫৩৫ সালে মাণ্ডু দখল করার পর বাচ্চু নামক জনৈক বন্দির কণ্ঠে একটি গান শুনে এত মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তাঁকে মুক্তি দিয়ে নিজের দরবারে গায়কের পদে বহাল করেন।
সম্রাট আকবরের আমলে ভারতে সংগীতের যথেষ্ট উন্নতি হয়। আকবর নিজে ছিলেন দক্ষ সংগীতজ্ঞ। তিনি সুরও সৃষ্টি করতেন। তাঁর আমলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অগণিত ইরানি, তুরানি, হিন্দুস্থানি সংগীতশিল্পীকে তিনি তাঁর রাজদরবারে আশ্রয় দিয়েছিলেন। সম্রাট আকবরের আমলে গানের জগতে সর্বাপেক্ষা খ্যাতিমান সংগীতকার ছিলেন তানসেন। তানসেন নেই, কিন্তু তাঁর নাম লোকের মুখে মুখে আজও ফিরছে। তানসেন ছিলেন গোয়ালিয়রের অধিবাসী এবং সেখানেই সংগীত শিক্ষালাভ করেন। আবুল ফজল তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, “ভারতে গত এক হাজার বছরের মধ্যে তানসেনের মতো কোনো গায়ক জন্মগ্রহণ করেনি।”
মোগল আমলের অন্যান্য বিখ্যাত গায়কদের মধ্যে যাঁদের নাম উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন - রাম দাস, বৈজু বাওরা, সুরদাস, লাল খান, জগন্নাথ, জনার্দন ভাট, মহাপট্টয়, হরিদাস রাম প্রমুখ।
এরপর ব্রিটিশ শাসনামলেও বাংলাদেশে গানের বেশ উন্নতি ঘটে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনিকান্ত সেন, অতুলপ্রসাদ সেন, সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার, চারণকবি মুকুন্দদাস প্রমুখের লেখা গান ইংরেজ শাসনের প্রথম পর্বে বেশ জনপ্রিয় ছিল। উচ্চাঙ্গ ও আধা-উচ্চাঙ্গ সংগীতেরও তখন বিস্তৃতি ঘটেছিল। ব্রিটিশ শাসনামলের শেষদিকে নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথের লেখা গানগুলো বাংলা গানের ভুবনকে সমৃদ্ধ করে তোলে। আধুনিক বাংলা গানের সৃষ্টিও হয় ঐ সময়ে।
একদা আমাদের দেশে হিন্দি গানের ভক্তও নেহাত কম ছিল না। বেশির-ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁর সম্মুখ দিয়ে হেঁটে গেলে শুনতাম - শামসাদ বেগম, লতা, সুরাইয়া, মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার, নূরজাহান প্রমুখের গান।

তাই তো বলি ঃ আমার ভা লো বা সা না চ গা ন 

-লিয়াকত হোসেন খোকন :

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ