পিয়াইন নদীর তীরবর্তী গোয়াইনঘাট

 


গোয়াইনঘাট বাংলাদেশের সিলেট জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

গোয়াইনঘাট জনপদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ - আবার প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ। ধরগ্রাম, আড়াইখা, পিয়াইনগুল, পাঁচভাগ ও জাফলং নিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা গঠিত। ব্রিটিশ কর্তৃক ভারত উপমহাদেশ দখলের দীর্ঘ ৯০ বছর পর ১৮৩৫ সালের ১৬ মার্চ জৈন্তাপুর ব্রিটিশের অধিকারে আসে। জৈন্তাপুর রাজ্যের পতনের পর ১৮৩৬ সালে গোয়াইনঘাট সিলেট জেলার কালেক্টরেটের অধীনে ন্যস্ত হয়।
গোয়াইনঘাট উপজেলার আয়তন মোট ৪৮১.১৩ বর্গকিমি। গোয়াইনঘাট উপজেলার জনসংখ্যা ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী মোট ২,৪১,৮৩৭ জন। গোয়াইনঘাটে প্রশাসন থানা স্থাপিত হয় ১৯০৮ সালে এবং গোয়াইনঘাট থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

গোয়াইনঘাট উপজেলার উত্তরে মেঘালয়, দক্ষিণে সিলেট সদর উপজেলা ও জৈন্তাপুর উপজেলা, পূর্বে জৈন্তাপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। গোয়াইনঘাট উপজেলার ইউনিয়ন সমূহ হ'ল -
রুস্তমপুর, পশ্চিম জাফলং, পূর্ব জাফলং, লেঙ্গুড়া, পূর্ব আলীর গাঁও, ফতেপুর, নন্দিরগাঁও, তোয়াকুল, ডৌবাড়ী, পশ্চিম আলীরগাঁও।

জনশ্রুতি আছে, গোয়াইনঘাট বাজারের পাশ দিয়ে প্রবহমান পিয়াইন নদী - এই নদী পারাপারের জন্য এখানে একটি ঘাট তৈরি করা হয়। জনসাধারণ এই ঘাট হয়ে নৌকায় নদী পারাপার হত। ঘাট স্থাপনের কারণে এই এলাকার নামকরণ করা হয় গোয়াইনঘাট।

গোয়াইনঘাটের দর্শনীয় স্থান হ'ল - জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল জলাবন ; পান্তুমাই, লক্ষণছড়া ; গোয়াইনঘাট উচ্চ বিদ্যালয় ; গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজ।

রাতারগুল জলাবনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর আর এরমধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। চিরসবুজ এই জলাবন গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত - জলাবন চেঙ্গির খালের সঙ্গে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে। এখানে সবচেয়ে বেশি রয়েছে করচ গাছ - বর্ষাকালে এই বন ২০ থেকে ৩০ ফুট পানির নীচে নিমজ্জিত থাকে। বাকি সারা বছর পানির উচ্চতা ১০ ফুটের মতো থাকে।
রাতারগুল জলাবনের দক্ষিণ দিকে রয়েছে দুটি হাওর। তাহলো - শিমুল বিল হাওর ও নেওয়া বিল হাওর।
সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার। সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটি গাছ রাতা গাছ নামে পরিচিত - সেই রাতা গাছের নামানুসারে এই বনের নাম হয়েছে রাতারগুল।

রাতারগুল জলাবনে রয়েছে - সাপ, বেজি, জোঁকন,বানর, গুইসাপ, সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল, বাজ পাখি। রাতারগুল জলাবনে বেড়ানোর জন্য রয়েছে ডিঙি নৌকা।
বিছানাকান্দি পর্যটন এলাকাটি মুলত একটি পাথর কোয়েরি, যেখানে নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করা হয়। এই জায়গায় খাসিয়া পাহাড়ের বিভিন্ন স্তর এসে একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে। খাসিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি ঝর্ণা এখানে একটি হ্রদের সৃষ্টি করেছে যা পিয়াইন নদীর সঙ্গে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে। এখানের শিলা পাথরগুলো একদম প্রাকৃতিক এবং এগুলো পাহাড়ি ঢালের সাথে পানির মাধ্যমে নেমে আসে।

বিছানাকান্দি গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তুমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। জাফলং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান।



তামাবিলও ভ্রমণের জন্য আকর্ষণীয় - তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে কয়লাসহ অন্যান্য পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়। গোয়াইনঘাটের উল্লেখযোগ্য নদী হ'ল - শাড়ি - গোয়াইন, পিয়াইন। এছাড়া রয়েছে দমদম হাওর, বড় দৈয়া , শিলচাঁদ, বড় ডুঙ্গাই, উনাই, বলালি ও নলকুরি বিল।
গোয়াইনঘাট হ'ল পাথর কোয়েরি অঞ্চল।
গোয়াইনঘাটের প্রধান কৃষি ফসল হ'ল - ধান, চা, পান, সরিষা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্ত প্রায় ফসলাদি হ'ল -
তিল, তিসি, তয়কর, সাতকরা।
গোয়াইনঘাটের প্রধান ফলফলাদি হ'ল - পেঁপে, আম, কমলা, কাঁঠাল, কলা, সুপারি, আনারস, বাতাবিলেবু, কুল।
গোয়াইনঘাটের বিলুপ্ত প্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
গোয়াইনঘাটের কুটিরশিল্প - বাঁশ ও বেত শিল্প।
গোয়াইনঘাটের প্রধান রপ্তানি দ্রব্য -
চা, পান, কমলা, পাথর, বালি, মাছ।
গোয়াইনঘাটের উল্লেখযোগ্য হাটবাজার হ'ল -
রাধানগর ; জাফলং ; বল্লাঘাট, হাদারপাড়, সালুটিকর।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী - ১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আলীরগাঁও ইউনিয়নের উজুহাত গ্রামে অতর্কিত হামলা করলে ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
গোয়াইনঘাটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর রয়েছে ৭ টি। এগুলো হ'ল - তামাবিল জিরো পয়েন্টে, উজুহাতে, আটগ্রামে, গোয়াইনঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায়, বীরকুল সহ অন্যান্য জায়গায়।
গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং এলাকায় বসবাস করে খাসিয়া উপজাতিরা।

-লিয়াকত হোসেন খোকন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ