প্রমত্তা পদ্মার তীরবর্তী ফরিদপুরে

 


কুমার নদী এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে এই ফরিদপুরের মধ্য দিয়ে। এই কুমারপাড়ের একটি জায়গার নাম সোজন বাদিয়ার ঘাট, ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেছেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীন কণ্ঠশিল্পী সুধীরলাল চক্রবর্তী। জেলার কৃতী ব্যক্তিত্ব হলেন - অম্বিকা চরণ মজুমদার - তাঁর জীবনকাল - ১৮২৬ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত। তিনি ছিলেন  সাবেক সভাপতি, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। মধ্যযুগের কবি আলাওল। ঔপন্যাসিক নরেন্দ্রনাথ মিত্র, বীরশ্রেষ্ঠ আবদুর রউফ।  ফরিদপুর শহরের পাশেই অম্বিকাপুর। এখানেই রয়েছে পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের কবর।মধুর আমার মায়ের হাসিগানখানি সুধীরলাল চক্রবর্তীকে অমর করে রেখেছে - তিনিও বৃহত্তর  ফরিদপুরের কৃতি সন্তান।



 হযরত শাহ ফরিদের নামানুসারেই ফরিদপুর নামকরণ হয়েছে। এর পূর্ণনাম ফতেহাবাদ। এই ফরিদপুরে সর্বপ্রথম নিম্নবর্ণের লোকজন বসতি স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীকালে মুসলমানরা বসতি স্থাপন করেন। ইতিহাস বলে ২৭৩ খ্রিস্টপূর্বে মৌর্যসম্রাট অশোক ফরিদপুরের দক্ষিণাঞ্চলে বৌদ্ধ সংঘরাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গুপ্তযুগে -অঞ্চলে রাজাদের দুর্গ ছিল। ১৩৩০ সালের পর থেকে ফরিদপুর মুসলমানদের অধীনে আসে। ইংরেজ আমলে অর্থাৎ ১৮৫০ সালে ফরিদপুরকে জেলার মর্যাদা দেওয়া হয়।

ফরিদপুরের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে কুমার নদী ছাড়াও পদ্মা, আড়িয়ালখাঁ আর মধুমতি নদী। কুমার নদীর বিভিন্ন শাখা গিয়ে মিশেছে পদ্মায়। কুমার নদী ফরিদপুর হয়ে দীর্ঘপথ এঁকেবেঁকে মুকসুদপুরে চলে গেছে। নদীর পাড়ে রয়েছে উজানী রাজবাড়ি।



পল্লীকবির বাড়ি

 ফরিদপুর শহরের একপ্রান্তে অম্বিকাপুর। এখানে গিয়ে দেখুন পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বাড়িঘর, কবরস্থান। এর চারদিকে নানান জাতের গাছগাছালি, বিল-ঝিল। পদ্মা নদী বেশি দূরে নয়। পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের বাড়ির সামনে পারিবারিক বাগান কবরস্থান। বেশ কয়েকটি কবর দেখবেন এখানে। মাঝখানে রয়েছে একটি ডালিমগাছ। এর সংলগ্নে কবি জসীমউদ্দীনের কবর। সাজানো-গোছানো। কবরস্থানের পরে পেছনে চার ভিটায় চারটি ঘর রয়েছে। তিন দিকে তিনটি টিনের ঘর রয়েছে। সামনের দিকে একটি একতলা দালান। কবি যে ঘরে বসে কবিতা লিখতেন সেই ঘরটি এখনও আছে। এটি ঘুরে দেখুন। কাছেই পদ্মা নদী। পদ্মার কাছে দাঁড়িয়ে প্রমত্তা পদ্মার কথা বারবার মনে হওয়া স্বাভাবিক। কবির যখন যৌবন তখন এই পদ্মায় ছিল ভরাযৌবন। যৌবনেই তিনি লিখেছিলেনকবরকবিতাটি। পল্লীকবির কবর দেখে মনে পড়বে ‘এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলেকবিতার এই লাইনগুলো। পদ্মা নদী বর্ষায় কিছুটা হলেও যৌবন ফিরে পায়। বিল-ঝিল, হাওরে তখন থাকে অথৈ পানি। সব যেন এখানে সবুজ সাজে সজ্জিত। দূরে কাশবন, দৃশ্যও দেখার মতো।

রাজেন্দ্র কলেজ

ফরিদপুরের রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটি দেখার মতো। চারদিকে গাছগাছালি, এরই অভ্যন্তরে রাজেন্দ্র কলেজের বিভিন্ন ভবন। ১৯১৮ সালে ২৯ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে প্রথম ক্লাস শুরু হয়, যা আজকের রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এক অম্লান ইতিহাস।

 ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত ফতেহাবাদ পরগনার জালালপুরে মহাকবি আলাওলের জন্ম, তাই এখানেও যাবেন। কবি আলাওলের জন্ম ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে। ফরিদপুরের ফতেহাবাদে গিয়ে আলাওলের স্মৃতিচিহ্ন পাওয়া যায় না এখন আর। তিনিতোহফাআরপদ্মাবতীকাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। ১৬৭৩ সালে কবি আলাওল মারা যান।



অন্যান্য তথ্য :

 পদ্মা-যমুনার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত নদীবিধৌত ফরিদপুর বদ্বীপীয় সমতল ভূমি দ্বারা গঠিত। ফরিদপুরের অন্য একটি নাম ছিলফতেহাবাদ হোসেন শাহ সর্বপ্রথম এই ফতেহাবাদের শাসনভার গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে কামেল পীর শেখ ফরিদের নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়ফরিদপুর

 ফরিদপুর জেলা মোট ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপজেলাগুলো হলো : ফরিদপুর সদর, মধুখালি, সদরপুর, চরভদ্রাসন, শালথা, বোয়ালমারী, ভাংগা, নগরকান্দা আর আলফাডাঙ্গা। জেলার আয়তন ,০৫২.৬৮ বর্গকিলোমিটার।

একনজরে

ফরিদপুর জেলার দর্শণীয় স্হান মথুরাপুরের দেউল - মধুখালি উপজেলায়। পল্লীকবি জসিমউদ্দীনের বাড়ি কবরস্থান। জগবন্ধু সুন্দরের আশ্রম - শহরে। সাতৈর মসজিদ - মধুখালি। পাতরাইল মসজিদ - ভাঙ্গা। দোলমঞ্চ, নারায়ণ মন্দির, শিব মন্দির, বসুদেব মন্দির, পঞ্চরত্ন সমাধি, নবরত্ন সমাধি, দুর্গা মন্দির, পদ্মা নদীর বালুচর, পদ্মা নদীর বালুচর, পদ্মা বাঁধ, সুইচ গেট।

-লিয়াকত হোসেন খোকন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ