ভারতের অন্যতম তীর্থস্থান বানারস



গঙ্গাতীরের প্রাচীন জনপদ বারানসি বা বানারস  একাধারে তীর্থক্ষেত্র এবং ঐতিহাসিক শহর। শহরের দুপ্রান্ত  থেকে বহমান বরুণা আর অসি নদী এসে মিশেছে গঙ্গায়।

গঙ্গাতীরের প্রায় শতাধিক নদীঘাট এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। প্রতিদিন সন্ধেবেলায় দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গারতি হয়।

নৌকায় চেপে গঙ্গার বুকে ঘাট দর্শনের জন্য খরচ হবে ঘণ্টাপ্রতি ১০০ - ১৫০ টাকা। ঘাটের ধারে রয়েছে মন্দির, হাভেলি, রাজপ্রাসাদ ও সাধুসন্তদের আশ্রম। ঘাটগুলোর মধ্যে প্রধান হলো দশাশ্বমেধ ঘাট। দিনভর এখানে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। একঘাট থেকে আরেক ঘাটে হেঁটেও বেড়ানো যায়। 

বারানসির কয়েকটি বিখ্যাত ঘাট হলো অসি ঘাট, তুলসী ঘাট, কর্ণাটক ঘাট, হরিশচন্দ্র ঘাট, বিজয়নগর ঘাট, কেদারা ঘাট, মানসসরোবর ঘাট, দ্বারভাঙা ঘাট, অহল্যাবাঈ ঘাট, দশাশ্বমেধ ঘাট, প্রয়াগ ঘাট, মণিকর্ণিকা ঘাট ইত্যাদি। এখানে প্রতিটি ঘাটই পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। হেঁটে ঘুরে দেখুন বারানসির বিখ্যাত গলিপথগুলো। 

শহরের প্রধান দ্রষ্টব্য কাশী বিশ্বনাথের মন্দির। দেবতা এখানে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের শিব। গলিপথে হেঁটে এই মন্দিরে পৌঁছতে হবে। মন্দিরে যাওয়ার পথে দেখবেন অন্নপূর্ণা মন্দির। এখানকার কয়েকটি বিখ্যাত মন্দির হলো - তুলসীমানস মন্দির, ভারতমাতা মন্দির, কালভৈরব মন্দির, সংকটমোচন হনুমান মন্দির, বিড়লা মন্দির।

 গঙ্গাতীরে রয়েছে আলমগীর মসজিদ।

গঙ্গার অপর পাড়ে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে রয়েছে রামনগর প্রাসাদ। গঙ্গার ধারেই এই দর্শনীয় দুর্গ-প্রাসাদের অবস্থান। ১৭ শতকে এই প্রাসাদ বানানো হয়। প্রাসাদের একাংশে রাজপরিবারের লোকজন আজও থাকেন। ভেতরের সংগ্রহশালাটি দেখার মতো। প্রবেশের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১৫ টাকা। প্রাসাদের মধ্যে রয়েছে রাজপরিবারের দেবতা ব্যাসকাশী মহাদেব মন্দির। রাজপ্রাসাদ-সংলগ্ন গঙ্গার ঘাটটি শিল্পমন্ডিত। এই প্রাসাদে আসার পথে দেখে আসুন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়।

 বেনারস থেকে সারনাথের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। বুদ্ধদেব এখান থেকেই বৌদ্ধধর্মের প্রচার শুরু করেন। এখানে রয়েছে ধামেকস্তূপ। মূল স্তূপটি অক্ষত থাকলেও অন্যগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত। এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক। এর গায়েই রয়েছে মূল গন্ধকুঠিবিহার বুদ্ধমন্দির। মন্দিরটি খুব সুন্দর। চারপাশে বিশাল বাগান রয়েছে। সারনাথে বিশ্বের কয়েকটি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী দেশের তৈরি বুদ্ধমন্দিরও রয়েছে। এছাড়া এখানে দেখবেন জৈন মন্দির ও পুরাতত্ব বিভাগের মিউজিয়াম (শুক্রবার বন্ধ)।



বারানসিতে উল্লেখিত দ্রষ্টব্যগুলো : 

সারা দিনের ট্যুরে বেড়ানোর খরচ অটোয় ৫০০ টাকা, গাড়িতে ১,০০০ টাকা। আরেক দিন চলুন ১,৬০০ টাকায় গাড়ি ভাড়া করে চুনার (৪০ কিলোমিটার), বিন্ধ্যাচল (৭০ কিলোমিটার), সীতামারি (৯০ কিলোমিটার)।

গঙ্গার তীরে টিলার ওপর গড়ে উঠেছে চুনার দুর্গ। দুর্গের মধ্যে মহল, মন্দির, মিনার আজও রয়েছে। চারপাশের সবুজ প্রকৃতি খুব সুন্দর। জলাশয়ের মাঝে বানানো সীতামারি মন্দিরটি শিল্পমন্ডিত। মন্দিরে রাম, লক্ষণ, সীতার মূর্তি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে সীতার পাতাল প্রবেশের দৃশ্য-সংবলিত মূর্তি। লাগোয়া জলাশয়ে বোটিং করা যায়। এখানে কৃত্রিম গুহা বানিয়ে তার মধ্যে রামায়ণের কাহিনি মডেল দিয়ে সাজানো রয়েছে।

অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তিও রয়েছে এখানে। মূল মন্দিরের সামনে সুবিশাল একটি হনুমান মূর্তি রয়েছে। সীতামারি গ্রামটি বেশ নির্জন ও সবুজে মোড়া। বিন্ধ্যাচল বিখ্যাত বিন্ধ্যাবাসিনী মন্দিরের জন্য। এটি সতীপীঠ। এখানে অষ্টভুজা ও কালিখো মন্দির দুটি অবশ্যই দেখবেন। মন্দির দুটির অবস্থান অরণ্যে ছাওয়া পাহাড়ি টিলার ওপর। 

বারানসিতে গিয়ে শুনেছি, কেউ বলেন - বানারস, কেউবা  বেনারসও বলেন। বানারসে মোট ৩ বার গিয়েছি। শেষবার সম্ভবত ২০০৮ সালে গিয়েছিলাম। সেই আলোকে এ লেখাটি লেখা হয়েছে।

লিয়াকত হোসেন খোকন: 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ