হাওরের শহর নেত্রকোনা



গারো পাহাড়ের পাদদেশে হাওর এলাকায় অবস্থিত নেত্রকোনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই জায়গা। এখানে সমুদ্র নেই তবে হাওর আর নদী আছে। নৌবিহার করে দারুণ আনন্দ পাবেন। নেত্রকোনার হাওরে কয়েকদিন বেড়ানো আপনার জীবনে স্মরণীয় ঘটনা হতে পারে।


নেত্রকোনার‌ মোহনগঞ্জ, আটপাড়া, খালিয়াজুরী, মদন, পূর্বধলা, কেন্দুয়ায় গেলে দেখবেন হাওর আর বিলাঞ্চল। এসব হাওরে বেড়ানোর সময় কেমন যেন এক অজানা আনন্দের শিহরণ এসে মনটাকে নাড়িয়ে দেবে।
যেভাবে যাবেন ঃ
ঢাকার মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে নেত্রকোনার বাস-কোস্টার ছাড়ে। মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টায় এখন নেত্রকোনা যাওয়া যায়। ইচ্ছে করলে আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ গিয়ে এরপরে কোস্টারে নেত্রকোনা যেতে পারেন। নেত্রকোনার কোস্টার ছাড়ে ময়মনসিংহের ব্র‏হ্মপুত্র ব্রিজের কাছ থেকে।

কোথায় থাকবেন ঃ
নেত্রকোনা জেলা শহর; তাই এখানে রাতযাপনে কোনো অসুবিধা নেই। রয়েছে হোটেল সৌরভ, হোটেল ইমরান।
যা দেখবেন যা জানবেন ঃ
নেত্রকোনায় দেখবেন হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী (রহ.)-এর মাজার শরিফ, গারো পাহাড়, সুমেশ্বরী নদী, রাজবাড়ি, চন্দ্রনাথ উচ্চবিদ্যালয়, দত্ত উচ্চবিদ্যালয়, বেইলি ব্রিজ, আঞ্জুমান স্কুল, মলিনী আখড়া ও মগড়া ব্রিজ। শহরের একপ্রান্তে রাজবাড়ি। এটি একাদশ শতাব্দীতে স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠা করেন রাজা সোমেশ্বর পাঠক। রাজবংশের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন ভোগেন্দ্র রাজবাহাদুর।
বর্তমান নেত্রকোনা শহরটি ময়মনসিংহ পরগনার ভূমিতে অবস্থিত। ব্রিটিশ রাজশক্তির প্রভাবে নেত্রকোনা নামক স্থানের নামকরণের উদ্ভব। ইংরেজ সরকার ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে নেত্রকোনাকে মহকুমা মঞ্জুর করে। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ওই মহকুমার কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে নেত্রকোনা মিউনিসিপ্যালিটি স্থাপন করা হয়। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে নেত্রকোনা সদর থানায় আধুনিক পুলিশ ব্যারাক, পরিদর্শন বাংলো নির্মাণ হয়।
নেত্রকোনার আশপাশে হাওরে ঃ
নেত্রকোনার মদনপুরে গেলে দেখবেন হযরত শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী (রহ.) - এর মাজার শরিফ। জানা যায়, ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে যে ৩৬০ জন আউলিয়া-দরবেশ উপমহাদেশে আগমন করেন, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
নেত্রকোনা শহর থেকে ৫ মাইল দূরে এই মদনপুরে তিনি শেষ জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। মদনপুরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে হাওর-বিল। বর্ষায় হাওর-বিল পানিতে ভরে ওঠে। এ সময় এখানে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াতের উপায় নৌকা। ইঞ্জিনচালিত বোটে ঘুরাতে আরও বেশি মজা।
খালিয়াজুরি, মদন, মোহনগঞ্জে গেলে হাওর এলাকা দেখতে পাবেন। নেত্রকোনা থেকে কোস্টারে মোহনগঞ্জ যাবেন। এখানে রাতযাপন করার জন্য আবাসিক হোটেল রয়েছে। বর্ষায় মোহনগঞ্জের হাওরে নৌ-বিহারে গিয়ে দু’কূলের দৃশ্য তন্ময় হয়ে তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়।
এখানের বেথাম গ্রামের প্রাচীন দুর্গ, শেখের বাড়ির মসজিদ, দৌলতপুরের মন্দিরটি সেই প্রাচীন ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কর্তৃক নির্মিত বেথাম দুর্গ ও তার রাজ্যকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার প্রাক-প্রস্তুতি ছিল এটাই।
হাওর দেখে জানবেন, সাগর থেকে সায়র, সায়র থেকে হাওর শব্দের উদ্ভব। মোহনগঞ্জ ১৯২০ সালে থানায় রূপান্তর হয়। ১৯২৯ সালে ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ রেলপথ স্থাপনের ফলে মোহনগঞ্জের গুরুত্ব অনেকাংশে বেড়ে যায়।
বর্ষায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে মোহনগঞ্জ থেকে খালিয়াজুরিতে যেতে পারেন। ঘণ্টা দুই সময় লাগবে। বর্ষায় হাওর হয়ে নৌকা খালিয়াজুরিতে যাবে।
জানা যায়, এ অঞ্চলে খাসিয়াদের অবস্থান ছিল বিধায় এখানকার নামকরণ হয় খাসিয়াজুরি। কালক্রমে শব্দটি রূপান্তর হতে হতে খালিয়াজুরিতে রূপ নিয়েছে। খালিয়াজুরি এক সময় ভাটি নামে পরিচিত ছিল। এই স্থানে কামরূপের রাজধানী প্রতিষ্ঠিত ছিল। হাওর এলাকার বাড়িগুলোতে গিয়ে দেখবেন ঘরে ঘরে হাঁস-মুরগি পালন করা হয়। মাছ ধরে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। হাওরের কোথাও বা চোখে পড়বে সবুজ ঘাসে আবৃত হয়ে আছে বিস্তৃত জায়গা। হাওরে নৌকা ভেসে যায়। হাঁসের পাল দেখে পেছনের স্মৃতি খুঁজতে সাধ জাগবে।



নেত্রকোনা এবং এর আশপাশে থেকে কয়েকদিন বেড়াতে ইচ্ছে হবে আপনারও। হাওর আর প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলির মোহে জড়িয়ে পড়বেন।
নেত্রকোনা জেলার আয়তন ২,৮১০.২৮ বর্গকিমি।
জনসংখ্যা ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী
২২,২৯,৪৬৪ জন।

দর্শনীয় স্থান -
মদনপুর হযরত শাহ সুলতান কমরউদ্দিন রুমি ( রঃ) এর মাজার শরীফ ; বিরিশিরি উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি ; বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড় ; কমলারাণীর দিঘি ; দুর্গাপুর কমরেড মণি সিংহের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ও স্মৃতিস্তম্ভ ; দুর্গাপুর কুমুদীনি স্তম্ভ ; দুর্গাপুর সোমেশ্বরী নদী ; মোহনগঞ্জ ডিঙ্গাপোতা হাওর ; চরহাইজদা হাওর ; মদন মগড়া নদী ; কংস নদী ; নিঝুম পার্ক ; নারায়ণ ডহর জমিদার বাড়ী ; বাঘবেড় জমিদার বাড়ী ; কলমাকান্দার লেঙ্গুরায় সাত শহীদের মাজার।
নেত্রকোনা জেলার অন্তর্গত উপজেলাগুলি হ'ল - আটপাড়া, কলমাকান্দা, কেন্দুয়া, খালিয়াজুড়ি, দুর্গাপুর, নেত্রকোনা সদর, পূর্বধলা, মদন, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ।

-লিয়াকত হোসেন খোকন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ