লালমনিরহাট: ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

 



লালমনিরহাট জেলা শহরের পুরান বাজারের

কাছেই এক আঙিনায় অবস্থিত মসজিদ ও মন্দির।
এখানে মুসলমানদের মসজিদ এবং
হিন্দুদের কালীবাড়ি দুর্গা মন্দির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।
দু'টি স্থাপনার দেয়াল প্রায় লাগোয়া।
এ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ভাবতেই ভালো লাগা কাজ করে।

লালমনিরহাটে কয়েকবার গিয়েছি, একবার নামাজ আদায় করে গেলাম মন্দিরে - ঠাকুর প্রণাম করে আমার হাতে তুলে দিলেন মিষ্টি।
একটু পরেই শুনতে পেলাম উলুধ্বনি -
কথা হ'ল এক হুজুরের সঙ্গে - তিনি বললেন, সবার উপরে মানুষ সত্য।
কথাটা শুনে বুকটা ভরে গেল কি যেন এক আনন্দে।

অপূর্ব এক শহর লালমনিরহাট -
ভোরে ফজরের সময় মোয়াজ্জিনের কন্ঠে মিষ্টি আজান শেষে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে চলে যায় - তার কিছুক্ষণ পরে মন্দিরে ঘন্টা বাজে
চলে পূজা অর্চনার আনুষ্ঠানিকতা।
এমনই সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন
বহন করছে শতবর্ষী মসজিদ ও মন্দির।
লালমনিরহাট এক অপূর্ব শহর - মানুষে মানুষে কত মিল মহব্বত।
লালমনিরহাট জেলায়
এক সময় হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মের বালক বালিকাদের সঙ্গে ছিল আমার
প্রীতির সম্পর্ক।
লালমনিরহাটের রবীন রায় আমার প্রাণের বন্ধু হয়ে এসেছিল জীবনে।
ওর বাড়িতে কত থেকেছি।
কত না ধরনের সবজি ও মাছ দিয়ে ভাত খেয়েছি।

নামাজ আদায় করে রবীন রায়ের হাতে হাত রেখে একই বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছি।
আমরা দু'জনে একে অপরের মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছি বলেই দু'নয়ন ভরে দেখেছি -
আদিতমারী, কালীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা সহ আরও কত কি জনপদ।
কালীগঞ্জের কাকিনায় গিয়ে দেখেছি বিখ্যাত নট রবি রায়, ভূমেন রায় ও ভানু রায়ের জন্মস্থান কাকিনা জমিদার বাড়ীর ধ্বংসাবশেষ ।

লালমনিরহাট জেলার তিস্তা ব্যারেজ, তিনবিঘা করিডর, সিন্দুরমতি মন্দির ও দীঘি, কবি শেখ ফজলুল করিমের বসত ভিটা, হাতীবান্ধা শালবন ; তুষভান্ডার জমিদার বাড়ী ও কালী মন্দির দেখেছি।
শুধু লালমনিরহাট নয়, সারা বাংলাদেশ জুড়ে রয়েছে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন।
কত হারিয়ে যাওয়া মন্দির পুনঃ নির্মাণ করেছেন বর্তমান সরকার। পূজার সময় দেয়া হয় বিশাল অংকের বরাদ্দ মন্দিরে মন্দিরে। আবার প্রতিটি দুর্গাপুজো কমিটি মোটা টাকা সরকারি সাহায্যও পেয়ে থাকে।

আমার জন্মস্থান পিরোজপুরের রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ীর মন্দির সহ প্রায় সকল দালানকোঠা প্রাচীন হয়ে যাওয়ার কারণে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত দেখেছিলাম সেই শৈশবে। শুধু কি তাই! রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ী ও মন্দির জঙ্গলে আচ্ছন্ন হওয়ার কারণে দিনেদুপুরে ওই পথে যেতে কেউ সাহস পেত না। অথচ সেই রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ী ও ⛪ মন্দিরগুলো আজ ঝলমল করছে। আধুনিকতা বলতে যা যা কিছু বুঝায় তার সব কিছু এখানের মন্দিরে - মন্দিরে রয়েছে। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যায় কত কি রান্নাবান্না হচ্ছে - এই তো এক বছর আগে গিয়েছিলাম, না খেয়ে আসতেই দিল না পূজারী।

মনে আছে, শৈশবে ঘুম থেকে উঠে মাঝেমধ্যে প্রতিবেশী কুঞ্জুবাবু কাকার বাড়িতে ঢুকে মাসিমাকে বলতাম, মাসিমা , লাড়ুটাড়ু - মিষ্টিটিষ্টি দাও। মাসিমা একরাশ হাসি দিয়ে কাসার প্লেটে কত না ধরনের মিষ্টি দিতেন - তা সবটা তো খেতেও পারতাম না। কত আন্তরিকতা - কত সম্প্রীতির ভালোবাসা।
যা মন থেকে হারিয়ে যায়নি - হৃদয়ে গেঁথে রইল সবকিছু । আমার হৃদয় বলে - চিরদিন একই বন্ধনে বাঁধা মোরা হিন্দু - মুসলমান। এ বাঁধন যাবে না কোনোদিন খুলে।

 -লিয়াকত হোসেন খোকন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ