সাতক্ষীরায় হোসেনপুর থেকে কলারোয়া


কলারোয়া বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

কলারোয়া উপজেলার অন্যতম প্রধান
আকর্ষণ হ'ল -
শ্যামসুন্দর মন্দির। এই মন্দিরটি জেলা শহর সাতক্ষীরা থেকে দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার।
যশোর - সাতক্ষীরা সড়কের পাশেই শ্যামসুন্দর মন্দিরটি।
কলারোয়া উপজেলা সদর থেকে
৮ কিলোমিটার পশ্চিমে সোনাবাড়িয়া গ্রামে অপূর্ব শিল্প সৌন্দর্য অঙ্গে ধারণ করে
এই তিনতলার মন্দিরটি আজও টিকে আছে। শ্যামসুন্দর মন্দিরটি দেখার জন্য প্রায় প্রতিদিন
বহু দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রী এই পথে আসেন।
শ্যামসুন্দর মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল ১৭৬৭ সালে।
মন্দিরটি নির্মাণের পরে বহুবছর ধরে
এখানের সন্মুখ প্রান্তরে
মেলা, কীর্তন গানসহ বিভিন্ন ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হতো সারা বছর ধরে।
কিন্তু তা আজ হারিয়ে গেছে।
শ্যামসুন্দর মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন হরিরাম দাস।

শ্যামসুন্দর মন্দিরকে সোনাবাড়িয়া মঠ বা মঠবাড়িও বলা হয়। তবে এই মন্দিরের পুরো নাম শ্যাম সুন্দর নবরত্ন মন্দির। মন্দিরটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
অনেকে মনে করেন , বৌদ্ধ ধর্মের কিছু
লোক ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
এরপরে ধর্ম প্রচারে ব্যর্থ হয়ে বুদ্ধদেবের শিষ্যরা এখান থেকে চলে যান।
মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে ১৭৬৭ সাল থেকে তৎকালীন জমিদার
এই মন্দিরটিকে পূজাঅর্চনার জন্য ব্যবহার শুরু করেন।
আবার কেউ কেউ মনে করেন,
মন্দিরটি ১৭৬৭ সালে জমিদার হরিরাম দাস বা দুর্গাপ্রিয় চৌধুরীই নির্মাণ করিয়েছিলেন। শ্যাম সুন্দর মন্দিরের আশেপাশে আরও ৯ টি মন্দির ছিল বলে অনেকে মনে করেন।
জনশ্রুতি আছে, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও নাকি এই মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেছিলেন।
কলারোয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও মনোরম, তাই এই জনপদে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। এছাড়া প্রধান আকর্ষণ শ্যাম সুন্দর নবরত্ন মন্দিরতো রয়েছেই ।

কলারোয়া উপজেলার পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।
এই উপজেলার উল্লেখযোগ্য স্থান হ'ল - জয়নগর ; জালালাবাদ ; যুগিখালী ; দেয়াড়া ; কুশোডাঙ্গা ; হেলাতলা ; কেরালকাতা ; চন্দনপুর ; সোনাবাড়ীয়া ; কেঁড়াগাছি ; লাঙ্গলঝাড়া ; কয়লা।

কলারোয়া উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বর্তমান কলারোয়ার পশুহাটের উত্তর - পশ্চিম পার্শ্বে মিলঘরের পিছনে ইংরেজদের নীলকুঠি ছিল। অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের বল্গাহীন নির্যাতন ও শোষণের সময় জমিদার রাণী রাশমনির নায়েব ছিল শ্রী মোহন ঘটক। হোসেনপুর পরগণার জমিদার কলকাতা কর্পোরেশন স্ট্রীটে বসবাসকারী রাণী রাসমনির কাছে একদা নায়েব শ্রী মোহন ঘটক হিসাব নিকাশ দাখিল করার জন্য উপস্থিত হন। রাণী রাশমনির বড় মেয়ে রানী জগদম্বাও মায়ের সাথে কলকাতায় পিতৃগৃহে একত্রে বসবাস করতেন। এদিকে নীলকর সাহেবদের অমানুষিক ও অসহ্য নির্যাতন ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার বিশেষ বিশেষ লোকজন ও কৃষকরাও নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের প্রতিকারের প্রার্থনা নিয়ে জমিদার রাণী রাশমনির বাসভবনে উপস্থিত হন। রাণী জগদম্বা
শ্রী মোহন ঘটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এর প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা এ যাবৎ গ্রহণ করা হয়েছে কি না জানতে
চান। নায়েব শ্রী মোহন ঘটক নীলকর সাহেবদের এ হেন চরম অত্যাচারকে মনে মনে ঘৃণা করতেন। কিন্তু মনোবল ও জনবলের অভাবে তিনি সরাসরি কিছু করতে পারতেন না। যে জন্য কৃষকরা নায়েবের উপর দোষারোপ করেন। তখন রাণী জগদম্বা নৈতিক সাহসের অভাব হেতু কাপুরুষতার জন্য নায়েব শ্রী মোহন ঘটককে তার মুখের উপর পুরুষ মানুষের পরিবর্তে মেয়ে মানুষ বলে আখ্যায়িত করেন। রাণী জগদম্বার কাছ থেকে " মেয়ে মানুষ " উপাধি পেয়ে রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে জেদি নায়েব শ্রী মোহন ঘটক মনে মনে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে হোসেনপুর ফিরে এলেন। এবার তিনি বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ ও কয়েক শত কৃষককে নিয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক একদিন রাতে নীলকুঠিতে অতর্কিত হামলা ও আক্রমণ চালিয়ে নীলকুঠি ভবনটি সম্পূর্ণ রূপে ভেঙ্গে চুরমার করে বিধ্বস্ত করলেন। ধ্বংসাবশেষ পার্শ্ববর্তী বেতনা নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হ'ল। তারপর কয়েকখানা লাঙ্গল দিয়ে ঐ রাতেই নীলকুঠি ভবন যেখানে ছিল সেখানে চাষ শুরু করলেন। সঙ্গে সঙ্গেই মই দিয়ে মাটি সমান করে অসংখ্য কলা গাছ রোপণ করা হ'ল। রোপণকৃত কলাবাগানের প্রবৃদ্ধি দেখে সবাই মুগ্ধ হলেন এবং অধিক সংখ্যক নানা জাতের কলাগাছ সেখানে রোপণ করা হয়। এই কলাগাছ রোয়া থেকে প্রথমে হোসেনপুর নামের পরিবর্তে
কলারুয়া এবং পরে নাম হয়ে গেল কলারোয়া।
কলারোয়া উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে - কপোতাক্ষ, বেত্রবতী, ইছামতী, সোনাই নদী।
কলারোয়া উপজেলার আয়তন ২৩২.৬৪ বর্গকিমি।
এই উপজেলার জনসংখ্যা ২,৬২,৩৯৩ জন।

-লিয়াকত হোসেন খোকন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ