সুন্দরবনের কোলে শ্যামনগর দোলে

 


শ্যামনগর বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার একটি উপজেলা। সুন্দরবন আর সমুদ্র সৈকত এই উপজেলার প্রধান আকর্ষণ। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে এই শ্যামনগরে। বিশেষ করে এখানের মুন্সিগঞ্জ ও বুড়িগোয়ালিনী থেকে চাঁদের আলোতে সুন্দরবনকে অতি মনোরম ভাবে দেখা যায় -

আর সেই দেখা কোনোদিন যায় কি ভোলা - যায় না তো ভোলা!
একদা শ্যামনগর জুড়েও ছিল সুন্দরবন, যা কিনা ক্রমে ক্রমে ধ্বংস করে এই শ্যামপুরেও গড়ে তোলা হয়েছে জনপদ।
দর্শনীয় স্থানের ছড়াছড়ি রয়েছে শ্যামনগরে -
তাই এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা স্থানীয় অধিবাসীদের বহু দিনের দাবী।
পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে দলে দলে ট্যুরিষ্টরা এ পথে আসবেন।
শ্যামনগরের প্রাচীন নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থান হ'ল -
ঈশ্বরীপুর যশোরেশ্বরী মন্দির ; বংশীপুর শাহী মসজিদ ; শ্যামনগর জমিদার বাড়ী - এ বাড়ীটি করেছিলেন হরিচরণ রায় চৌধুরী ; নূরনগর নুরুল্লা খাঁ মাজার ; ঈশ্বরীপুর হাম্মামখানা ; ভুরুলিয়া সার্বজনীন কালি মন্দির ; মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত ;
ঈশ্বরীপুর চন্ড ভৈরবের মন্দির ; যীশুর গির্জা ;
গোপালপুর গোবিন্দ দেবের মন্দির ; খানপুর - ভুরুলিয়া জাহাজঘাটা নৌদুর্গ ; ধুমঘাট রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ও রাজবাড়ী ; গোপালপুর ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ ; মুন্সিগঞ্জ আকাশনীলা পার্ক ও ইকো ট্যুরিজম ; গোপালপুর দীঘি ও পার্ক ; সুন্দরবন।
শ্যামনগরের উল্লেখযোগ্য জনপদ হ'ল - ভুরুলিয়া, কাশিমাড়ী, শ্যামনগর, নূরনগর, কৈখালী, রমজাননগর,
মুন্সিগঞ্জ, ঈশ্বরীপুর, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, গাবুরা ও পদ্মপুকুর।
শ্যামনগর উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, শ্যামনগরের আদি অধিবাসীরা ছিল মহাভারতীয় যুগের মানুষদের বংশধর। শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন তাদের আরাধ্য দেবতা। শ্রীকৃষ্ণের শতাধিক নামের মধ্যে শ্যাম, গোপাল, গোবিন্দ, গোকুল, গোপী প্রভৃতি নামগুলো অধিক পরিচিত ও প্রচলিত। একালের মতো সেকালেও ছেলে মেয়ে ও গ্রামগঞ্জের নাম দেবদেবী ও অবতারদের নামে নামকরণ করার নিয়ম প্রচলিত ছিল। সম্ভবত এখানকার আদি অধিবাসীরা তাঁদের প্রিয় দেবতা শ্রীকৃষ্ণের " শ্যাম " নামানুসারে তাঁদের বসবাসের এলাকাটির নাম শ্যামনগর রেখেছিলেন।



অন্যমতে, ইংরেজ আমলে প্রথমে এখানে একটি ফাঁড়ি ছিল। পরবর্তীতে ফাঁড়িটিকে থানায় উন্নীত করার সময় শ্যামসুন্দর নামক একজন ভদ্রলোক প্রয়োজনীয় গৃহাদি নির্মাণের জন্য একখণ্ড জমি ইংরেজ সরকারকে দান করেন। আর এই কারণে স্থানটির নামকরণ দাতার নামানুসারে শ্যামনগর হয়েছিল।

আরও জানা যায়, মহারাজা প্রতাপাদিত্যের পুত্র উদয়াদিত্য মোগলদের হাত থেকে রাজ্য রক্ষার্থে একটি খাল খনন করান। একসময় মোগল সৈন্যরা এগিয়ে আসে উদয়াদিত্যর রাজ্য দখল করতে। অগ্রসরমান সৈনিকরা প্রতিরোধ খাল দেখে পশ্চাৎপদ সৈনিকদের সতর্ক সংকেত হিসেবে তারা খালের সামনে শ্যামনি গর বলে চিৎকার করেন। পরবর্তীতে সময়ে শ্যামনি ও গর নিয়ে শ্যামনগর নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও মুন্সিগঞ্জে যাওয়া যায়। মুন্সিগঞ্জে আছে বন বিভাগের অফিস, সেখান থেকে অনুমতি নিয়ে লঞ্চে, ইঞ্জিন চালিত টলারে কিম্বা নৌকা যোগে সুন্দরবনে যাওয়া যায়।
শ্যামনগরে রাত যাপন করার জন্য হোটেল ও গেষ্ট হাউস রয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার আয়তন ১,৯৬৮.২৪ বর্গকিমি।
জনসংখ্যা ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী -
১,৫৩,৪৪১ জন।
শ্যামনগর উপজেলায় গ্রামের সংখ্যা ২১৬ টি।
শ্যামনগরে থানা স্থাপিত হয় ১৮৯৭ সালে।
আর উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮৩ সালে।
শ্যামনগর উপজেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন -
রাজা হরিণ রায় চৌধুরী ; জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।
তবে অনেকে বলেন পচাব্দী গাজী হলেন এখানের প্রখ্যাত শিকারী।
আবার অনেকে বলেন, " সুন্দরবন থেকে বাঘ নির্মূলের জন্য পচাব্দী গাজী দায়ী। কারণ, তিনি সুন্দরবনের অসংখ্য বাঘ হত্যা করেছেন। তাই সুন্দরবন থেকে বাঘ হারিয়ে যাওয়ার জন্য তিনিও কম দায়ী নয়। "
এই কথাগুলি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম।

-লিয়াকত হোসেন খোকন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ